সামর্থ্যবান নারীর কোরবানি দিবে কিনা?Will a capable woman be sacrificed?
কোরবানি একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা নারী-পুরুষ সবার জন্য প্রযোজ্য। যাদের কোরবানি করার সামর্থ্য আছে তাদেরই কোরবানি করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো এবং কোরবানি করো।’ (সুরা : কাউসার, আয়াত : ২)
কোরবানির দিন কোরবানির চেয়ে আল্লাহর কাছে অতিপ্রিয় আর কোনো আমল নেই।
কোরবানির মাধ্যমে পরকালে দ্রুত গৃহীত ইবাদতের সওয়াব আমলনামায় যুক্ত হয়। সামর্থ্যবান নারীরা এই মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত থেকে বঞ্চিত হবেন না। প্রফুল্ল মনে কোরবানির আমলে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবেন। নবী (সা.) প্রফুল্ল মনে কোরবানি করতে বলেছেন।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আদম সন্তান কোরবানির দিন (পশু জবাই করে) রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে আল্লাহর কাছে অতি প্রিয় আর কোনো আমল করে না। কিয়ামতের দিন জবাইকৃত পশু তার শিং, পশম, খুরসহ হাজির হবে। কোরবানির রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে গৃহীত হয়ে যায়। অতএব, তোমরা কোরবানির মাধ্যমে নিজেকে প্রফুল্ল করো।
অর্থাৎ প্রফুল্ল মনে কোরবানি করো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৪৯৩)
নারীর কোরবানিতে পুরুষের সহযোগিতা
সামর্থ্যবান নারীর ওপর কোরবানি অপরিহার্য। কিন্তু স্বামী, পিতা বা পুরুষ অভিভাবকের উচিত নারীর কোরবানির ব্যবস্থা করে দেওয়া। কারণ সামর্থ্য থাকলেও অনেক নারীর পক্ষে কোরবানির ব্যবস্থাপনা অনেক কষ্টের হয়। নারী কোরবানি করতে আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান না হলেও পুরুষ অভিভাবক নিজের কোরবানির পাশাপাশি নারীর পক্ষ থেকে কোরবানি করতে পারেন।
বামী নিজের কোরবানির পাশাপাশি স্ত্রীর পক্ষ থেকে কোরবানি করতে পারেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ...আমরা যখন মিনায় ছিলাম, তখন আমার কাছে গরুর গোশত নিয়ে আসা হলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কী? লোকজন জবাব দিল, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু কোরবানি করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ৫২২৮)
কোরবানির সময় উপস্থিত থাকা
নারীরাও কোরবানির পশু জবাই করতে পারেন। জবাই করতে না পারলে কমপক্ষে জবাই করার স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত। ফাতিমা (রা.) কোরবানি করেছেন। নবী (সা.) তাঁকে কোরবানির কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছেন। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে ফাতিমা! ওঠো, তোমার কোরবানির পশুর কাছে যাও। কেননা তার রক্তের প্রথম ফোঁটা প্রবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তোমার কৃত সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর বলো, ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন।’ অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই নিবেদিত। তাঁর কোনো শরিক নেই। তাতে আমি আদিষ্ট হয়েছি আর আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’
বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! এটি আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য নির্ধারিত, নাকি সব মুসলমানের জন্য? তিনি বলেন, ‘সব মুসলমানের জন্য’। (সুনানুল কুবরা, হাদিস : ১৯১৬২; মাজমাউজ জাওয়াইদ, হাদিস : ৫৯৩৫)
বর্তমানে আমাদের সমাজে অনেক কর্মজীবী নারী আছেন, যাঁরা বেতন ও বোনাস পেয়েছেন। কোরবানি করার আর্থিক সামর্থ্যও রাখেন। কর্মজীবী ছাড়াও অনেকে সামর্থ্যবান আছেন, কিন্তু স্বামী অথবা পিতার কোরবানি করাকেই যথেষ্ট মনে করেন। এভাবে অনেক নারীই কোরবানি না দিয়ে কোরবানির অফুরন্ত ফজিলত ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নারীদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং পুরুষদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। দ্বিনি কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করার মাধ্যমেই শান্তির পরিবার গড়ে উঠবে, ইনশাআল্লাহ।
Post a Comment