Header Ads

পরীক্ষায় ফেল করেও তারা আজ সফল!They succeeded today despite failing the exam!

 

পরীক্ষায় ফেল করেও তারা আজ সফল!They succeeded today despite failing the exam!


‘তুমি ক্লাসে ফেল করেছ? তাহলে তুমি কিছুই করতে পারবে না’—এই ধারণা বহু শিক্ষার্থীকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভেঙে দেয়। অথচ ইতিহাস বলছে, বিশ্বের অনেক সফল মানুষ একসময় পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন বা পড়ালেখায় খুব একটা ভালো ছিলেন না। কিন্তু তারা হাল ছাড়েননি। ব্যর্থতাকে করেছেন মূলধন, আত্মবিশ্বাসকে করেছেন চালিকাশক্তি। শিক্ষা ও সনদকে ছাড়িয়ে তারা হয়ে উঠেছেন বিশ্বের অনুপ্রেরণা।

এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো এমনই কিছু মানুষের কথা—যারা পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন, কিন্তু তারা প্রমাণ করে দিয়েছেন, জীবনে সফল হওয়ার জন্য নম্বর নয়, প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গি, সাহস, আর পরিশ্রম।

জ্যাক মা

চীনের বিখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জ্যাক মা জীবনে বহুবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় গণিতে পেয়েছিলেন মাত্র ১ নম্বর। তিনবার চেষ্টা করেও ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি। শেষমেশ হ্যাংঝৌ নরমাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন, যেটাকে তখন ‘চতুর্থ শ্রেণির’ বিশ্ববিদ্যালয় বলা হতো।

চাকরির ক্ষেত্রেও ভাগ্য তার সহায় হয়নি। কেএফসিতে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন, যেখানে ২৪ জনের মধ্যে ২৩ জন চাকরি পান, বাদ পড়েন কেবল তিনি। পুলিশের চাকরির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।

কিন্তু জ্যাক মা হাল ছাড়েননি। ১৮ জন সহযোদ্ধাকে নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে শুরু করেন আলিবাবা। প্রথম দিকে কেউ তাদের পরিকল্পনায় বিশ্বাস করেনি। এমনকি ৩০ জন বিনিয়োগকারী তাদের ফিরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তিনি বিশ্বাস রেখেছিলেন নিজের ওপর। আজ তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি আলিবাবা একটি বৈশ্বিক শক্তি, আর তিনি নিজে হয়ে উঠেছেন তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এক জীবন্ত কিংবদন্তি।

স্টিভ জবস 

অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস কলেজে ভর্তি হলেও তা শেষ করেননি। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কম থাকলেও প্রযুক্তি, নকশা আর উদ্ভাবনী চিন্তায় তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। মাত্র ২০ বছর বয়সে গ্যারেজে বসেই তৈরি করেন অ্যাপল। যন্ত্রণা, চ্যালেঞ্জ, আর ব্যর্থতাকে সঙ্গী করেই এগিয়েছেন তিনি।

এক সময় তাকে নিজ প্রতিষ্ঠান থেকেও বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। ফিরে এসে আবার গড়েছেন এক অভাবনীয় প্রযুক্তির জগৎ। আইফোন, আইপ্যাড, ম্যাকবুক—সবকিছুর পেছনে রয়েছে তার দূরদর্শী চিন্তা।

বিল গেটস 

বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি বিল গেটস হার্ভার্ডে ভর্তি হয়েও তা শেষ করেননি। কলেজের গণ্ডি না পেরিয়েও তিনি তৈরি করেন মাইক্রোসফট, যা আজ বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির শীর্ষ প্রতিষ্ঠান।

তিনি প্রমাণ করেছেন, ডিগ্রি থাকলেই মানুষ বড় হয় না—বড় হয় চিন্তা, উদ্ভাবন আর সাহসের মাধ্যমে।

ধীরুভাই আম্বানি 

ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী শিল্পপতিদের একজন ছিলেন ধীরুভাই আম্বানি। স্কুলজীবনে লেখাপড়ায় ছিলেন একেবারেই গড়পড়তা। পড়াশোনা বেশি দূর এগোয়নি। কিন্তু তার বুদ্ধিমত্তা, ঝুঁকি নেওয়ার সাহস ও পরিশ্রম তাকে নিয়ে যায় সাফল্যের শিখরে। ছোট এক দোকান থেকে শুরু করে গড়ে তোলেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ—যেটি আজ ভারতের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী।

উইনস্টন চার্চিল 

ইংল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম সফল প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল স্কুলজীবনে ছিলেন একজন খারাপ ছাত্র। বারবার ফেল করতেন, শিক্ষকরা বলতেন—তিনি কিছুই করতে পারবেন না। অথচ তিনিই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনকে নেতৃত্ব দিয়ে রক্ষা করেছিলেন। 

চার্চিল জীবনে হাল ছাড়েননি। ইতিহাসে তিনি জায়গা করে নেন এক যুদ্ধনায়ক ও কূটনৈতিক বীর হিসেবে। পরবর্তীতে পান নোবেল পুরস্কারও।

ব্যর্থতার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সাফল্যের বীজ

শিক্ষাগত ব্যর্থতা অনেকের জীবনে এক ধাক্কা হতে পারে, কিন্তু সেটা জীবনের শেষ কথা নয়। উপরোক্ত উদাহরণগুলো প্রমাণ করে, যারা নিজের স্বপ্নে বিশ্বাস রাখে, যারা পরিশ্রমে ক্লান্ত হয় না, তারাই একদিন উঠে দাঁড়ায়।

আপনি পরাজয়ের পর কী করবেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ব্যর্থ হয়ে কী শিখলেন, সেই শিক্ষাটাই আপনার ভবিষ্যতের ভিত্তি। সঠিক সময়, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, আর সাহসিকতা—এই তিনটিই যেকোনো মানুষকে সাফল্যের পথে নিয়ে যেতে পারে।তথ্যসূত্রঃযুগান্তর


No comments