Header Ads

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন কী কাজ করবে/What will the UN High Commission for Human Rights do in Dhaka?

 

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন কী কাজ করবে/What will the UN High Commission for Human Rights do in Dhaka?


বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্বাক্ষরের পর ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের (এইচআরসি) একটি মিশন চালু হওয়ার বিষয়টি এখন নিশ্চিত হয়ে গেছে। 

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, বাংলাদেশে জাতিসংঘের এই দপ্তর চালু হলে এখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য তা সহায়ক হবে।

 বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বলা হয়েছে, মানবাধিকারের সুরক্ষা ও বিকাশে সহায়তা করার লক্ষ্যে একটি মিশন খোলার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস এবং বাংলাদেশ সরকার তিন বছর মেয়াদি একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে।

বাংলাদেশে যে ওএইচসিএইচআর-এর একটি অফিস খোলার কথা হচ্ছে, এই তথ্যটি সামনে আসে গত ২৯ জুন।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলই ওইদিন এক সংবাদ সম্মেলনে এটি প্রথম জানান। এরপর ঢাকায় এই কার্যালয় খোলা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানারকম দৃষ্টিভঙ্গি ও বিতর্ক রয়েছে।

সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি মহল আপত্তি জানিয়ে আসছে, বিশেষ করে কয়েকটি ইসলামপন্থি দল ও সংগঠন সভা করে সরাসরি নিজেদের আপত্তির কথাও জানিয়েছে। আবার মানবাধিকারকর্মীরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

কিন্তু কেন জাতিসংঘের এই অফিস ঘিরে কিছু দলের আপত্তি? কোনো দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের মিশন আসলে কী কাজ করে?

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন কী কাজ করে

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন (Office of the High Commissioner for Human Rights - OHCHR) এমন একটি সংস্থা যার মূল কাজ হলো, বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষা, এ সংক্রান্ত প্রচার ও বাস্তবায়নে সহায়তা করা।

এই দপ্তরটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির তথ্য সংগ্রহ করে, পর্যালোচনা করে এবং প্রতিবেদন তৈরির মাধ্যমে সবার সামনে তা তুলে ধরে। সেসব প্রতিবেদন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। এর মাধ্যমে সেসব দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ধারণা করতে পারে।

সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অনেক সময় উন্নত দেশগুলোর সম্পর্ক, বিনিয়োগ ও অনুদানের বিষয় নির্ভর করে।

বিশেষ করে, সংঘাতপ্রবণ দেশগুলোয় ওএইচসিআর-এর এই অফিসগুলো ওইসব দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। এরপর তারা তা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করে। বিশেষ করে নির্যাতন, বৈষম্য, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, নারী ও শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলোতে তদন্ত ও প্রতিবেদন তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে এই অফিস।

অনেক সময় কোনো দেশে কার্যালয় না থাকলেও যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে।

সেখানে বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে এই সংস্থাটি। এছাড়াও, মানবাধিকার সুরক্ষায় তারা সরকার, নাগরিক সমাজ, ভুক্তভোগী ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে কাজ করে।

যদিও মানবাধিকার হাইকমিশনের প্রতিবেদন বা সুপারিশ কোনো দেশের জন্য পালন করা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু অনেক সময় এসব প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে জাতিসংঘ ও উন্নত দেশগুলোর নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘মিশনটির লক্ষ্য হচ্ছে, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সংগঠনগুলোকে প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, সক্ষমতা বৃদ্ধি, আইনি সহায়তা ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিশালীকরণের বাংলাদেশকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তার মানবাধিকার সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা পূরণে সহায়তা করা।’

ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ‘ওএইচসিএইচআর মিশন মানবাধিকারের যেকোনো গুরুতর লঙ্ঘনের প্রতিরোধ ও প্রতিকার, বিগত সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর মনোনিবেশ করবে।’

যেসব দেশে মানবাধিকার হাইকমিশনের অফিস রয়েছে

ওএইচসিআর-এর সদর দপ্তর হলো সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ওএইচসিআর-এর একটি নৈতিক-নীতিনির্ধারণী অফিস রয়েছে।

সংস্থাটির ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় দু শ দেশের মধ্যে তাদের অফিস রয়েছে মাত্র ১৬টি দেশে।

এই অফিসগুলো ওই দেশগুলো নিয়েই সংশ্লিষ্ট অফিসে বসে কাজ করে।

এই দেশগুলোর মাঝে রয়েছে–বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চাড, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, গিনি, হুন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মেক্সিকো, নাইজার, ফিলিস্তিন, সিরিয়া (লেবাননের বৈরুত থেকে পরিচালিত), সুদান, টিউনিশিয়া ও ইয়েমেন।

এ ছাড়া, তাদের আরও দুটো অফিস রয়েছে। একটি দক্ষিণ কোরিয়ায়, অন্যটি ইউক্রেনে।

এই অফিসগুলোর বেশিরভাগই আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় যেখানে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ রয়েছে। বাকিগুলোর প্রায় সবই এশিয়া, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে।

এর বাইরে, জাতিসংঘের ৯টি দেশে বর্তমানে শান্তিরক্ষা মিশন চলছে। এসব দেশে ওএইচসিআর-এর মানবাধিকার বিষয়ক আলাদা বিভাগ বা ইউনিট আছে। দেশগুলো হলো–আফগানিস্তান, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, হাইতি, ইরাক, কসোভো, লিবিয়া, সোমালিয়া ও দক্ষিণ সুদান। এই দেশগুলো আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে বিস্তৃত।

এগুলোর বাইরেও বিশ্বব্যাপী ১৩টি আঞ্চলিক অফিস রয়েছে ওএইচসিআর-এর। এর মাঝে ১১টি হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ অফিস, বাকি দুটি হলো হলো বিশেষ কেন্দ্র।

আঞ্চলিক অফিসগুলো অবস্থান করছে পূর্ব, দক্ষিণ, পশ্চিম আফ্রিকায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায়, মধ্য এশিয়ায়, ইউরোপে, মধ্য আমেরিকায়, দক্ষিণ আমেরিকায় এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে। বাকি দুই বিশেষ কেন্দ্র মধ্য আফ্রিকা এবং কাতারে অবস্থিত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়টি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অবস্থিত।

এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ওএইচসিআর-এর কার্যালয় থাকলেও শুধু দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এই অঞ্চলের কোনো দেশে সংস্থাটির কোনো কার্যালয় নেই। এমনকি আঞ্চলিক দপ্তরও নেই।

তবে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সাল পর্যন্ত সংস্থাটি বিশ্বের ৪৩টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এর মাঝে বাংলাদেশের নামও রয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় যে হত্যাকাণ্ড হয়েছিল, তা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য ওই বছরের সেপ্টেম্বরে হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসেছিলেন।তথ্যসূত্রঃকালেরকন্ঠ



No comments