Header Ads

আবারও বৃত্তি পরীক্ষা, আপত্তি শিক্ষাবিদদের/Scholarship exam again, academics object

আবারও বৃত্তি পরীক্ষা, আপত্তি শিক্ষাবিদদের/Scholarship exam again, academics object


 আবারও বৃত্তি পরীক্ষা, আপত্তি শিক্ষাবিদদের/Scholarship exam again, academics object

আবারও প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। এ বছর থেকেই এই পরীক্ষা নেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত পরামর্শক কমিটির প্রধানই বলেছেন, এই পরীক্ষা নেওয়া হলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে। তাঁর মতে, এই পরীক্ষা নেওয়ার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। বরং সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষায় সমতা ও গুণগত মান উন্নত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট আরও কেউ কেউ এই উদ্যোগে আপত্তি করেছেন। তাঁদের মতে, এই পরীক্ষা বাস্তবে শিশুদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে এবং এটি শিশু বিকাশেরও পরিপন্থী। এতে মেধাবী ও অমেধাবী, এমন একটি বিভাজনও তৈরির আশঙ্কা আছে।

তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, এই পরীক্ষা আগেও একসময় নেওয়া হতো। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ে ও তাতে মানে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা আর্থিকভাবেও উপকৃত হয়।

২০০৯ সালের আগে পৃথকভাবে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হতো। পঞ্চম শ্রেণির বাছাই করা শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেত। কিন্তু সেটি বাদ দিয়ে ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শুরু হয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা। এতে সব শিক্ষার্থীই বৃত্তি পাওয়ার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারত। যদিও পিইসি পরীক্ষা নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা ছিল। কারণ, এই পরীক্ষার নামে একধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। কোচিং-প্রাইভেটের প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। শুধু তা–ই নয়, ছোটদের এই পরীক্ষাতেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনা ঘটেছে। যদিও করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং এরপর নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা বিবেচনায় পিইসি পরীক্ষা আর হয়নি।

কিন্তু ২০২২ সালে বছরের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে আকস্মিকভাবে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও তখনো বিশেষজ্ঞরা সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রশাসন তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে বৃত্তি পরীক্ষা নেয়। কিন্তু এরপর ওই বৃত্তি পরীক্ষার ফল নিয়ে ব্যাপক ভুলভ্রান্তির ঘটনা ঘটে। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ২০২৩ সালেও বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও শেষমেশ তা আর হয়নি। এখন আবারও সেই আগের পথেই হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।

অভিযোগ আছে, কর্মকর্তাদের একটি অংশ এই পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহী। তাঁদের চাওয়াই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

৩ মে লক্ষ্মীপুরে এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, প্রাথমিকে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হয়েছে। বৃত্তিও চালু করতে যাচ্ছেন।

দেশের প্রাথমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে পঞ্চম শ্রেণির সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর পরীক্ষা নেওয়া হবে, এটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায়, কতজন এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে, সে বিষয়ে নীতিমালা এখনো ঠিক হয়নি। জুনের মধ্যেই তা ঠিক হয়ে যাবে।

আপত্তি শিক্ষাবিদদের

শিক্ষাবিদদের মতামত উপেক্ষা করে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে এ পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগে আপত্তি করছেন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের অনেকেই।

প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নেরউদ্দেশ্যে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ৯ সদস্যের পরামর্শক কমিটি গঠন করেছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই কমিটির প্রধান ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই কমিটি সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিটি এই পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করেনি।

কমিটির প্রধান অধ্যাপক মনজুর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কোনো সুপারিশ না করলেও তাঁরা মূল প্রতিবেদনের আলোচনায় বলেছেন প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সমতা ও মান—এই দুটো লক্ষ্যের ওপর কোনো প্রভাব রাখে না। বরং কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। কারণ, আগের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বিদ্যালয়গুলো তখন কেবল যারা বৃত্তি পরীক্ষা দিতে পারে, এমন শিক্ষার্থীদের ওপর শিক্ষকেরা বেশি মনোযোগ দেন। বরং এলাকাভিত্তিক দরিদ্র নির্ধারণ করে উপবৃত্তির ওপর জোর দেওয়া দরকার।

শিক্ষাবিদ মনজুর আহমদ বলেন, কর্মকর্তাদের একটি সাধারণ ধারণা হলো বৃত্তি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা বেশি পড়ালেখা করে এবং এতে শিক্ষার মান বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। এই পরীক্ষা নিলে বরং ক্ষতি হবে। তাই এই পরীক্ষা না নিয়ে সামগ্রিকভাবে সমতা ও গুণগত মান উন্নত করার জন্য পরামর্শক কমিটির যেসব সুপারিশ আছে, সেগুলোতে নজর দেওয়া দরকার।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরীও মনে করেন, প্রাথমিক বৃত্তি নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অতীতে এসব পরীক্ষার মাধ্যমে নানা রকমের নেতিবাচক প্রবণতাই দেখা গেছে। নির্ধারিত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে নিয়ে এই পরীক্ষা নেওয়া হলে তা কোটার ওপরই গুরুত্ব দেওয়া হবে; যা বৈষম্য বাড়াবে।প্রথম আলো

No comments