Header Ads

এসএসসির ব্যবহারিক পরীক্ষা: সঠিক প্রস্তুতির সাতটি নিয়ম/SSC Practical Exam: Seven Rules for Proper Preparation

এসএসসির ব্যবহারিক পরীক্ষা: সঠিক প্রস্তুতির সাতটি নিয়ম/SSC Practical Exam: Seven Rules for Proper Preparation


 এসএসসির ব্যবহারিক পরীক্ষা: সঠিক প্রস্তুতির সাতটি নিয়ম/SSC Practical Exam: Seven Rules for Proper Preparation

প্রিয় এসএসসি পরীক্ষার্থী, এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা বাকি রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এসএসসির ব্যবহারিক পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে। শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ ১৫ মে থেকে ২২ মে ২০২৫ পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়ার তারিখ দিয়েছে। তোমার ব্যবহারিক পরীক্ষা এই সময়ের মধ্যে যেকোনো দিন নির্ধারণ করবে। ব্যবহারিক পরীক্ষায় ভালো করতে হলে তোমাকে অবশ্যই কিছু নিয়মকানুন মানতে হবে।

*যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে—

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত, কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ্যবিজ্ঞান, চারুকলা, সংগীত ইত্যাদি যাদের যে যে বিষয় রয়েছে, তাদের সে সে বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

১. ব্যবহারিক পরীক্ষার দিন যা লাগবে

ব্যবহারিক পরীক্ষার দিনেও তোমার এসএসসির প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, দু–তিনটি কলম, জ্যামিতি বক্স, স্কেল, ক্যালকুলেটর, ব্যবহারিক খাতা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ডিসেকটিং বক্স ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে নিতে হবে।

২. যা লিখতে হবে

ব্যবহারিক খাতার ওপরের মলাটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখতে হবে। নিজের নাম বা বিদ্যালয়ের নাম লেখার দরকার নেই।

৩. উত্তরপত্রে লেখা

ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য যে উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয়, তাতে ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষণের প্রয়োজনীয় অংশ লিখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনো অংশ বাদ না পড়ে। এই উত্তরপত্রও পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করতে হবে।

৪. লটারি হবে

প্রশ্নে উল্লেখিত পরীক্ষণ হতে পরীক্ষার্থীদের মাঝে সাধারণত লটারির মাধ্যমে পরীক্ষণ নির্ধারিত হবে।

৫. মৌখিক পরীক্ষা

ব্যবহারিক পরীক্ষার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ মৌখিক পরীক্ষা। মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করার জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাঠ্যবইয়ে দেওয়া সংজ্ঞা, সূত্র ইত্যাদি হুবহু আয়ত্ত করতে হবে। তা ছাড়া পরীক্ষণ-সংশ্লিষ্ট অংশ থেকে প্রায়ই মৌখিক পরীক্ষায় জানতে চাওয়া হয়ে থাকে।

৬. হাতে-কলমে কাজ

ব্যবহারিক পরীক্ষণে হাতে-কলমে কাজ করার মাধ্যমে উত্তরপত্রে লিখতে হয়। প্রতিটি পরীক্ষণের জন্য আলাদা অংশে আলাদা নম্বর বরাদ্দ থাকে। সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। কোনো অংশের নম্বর যেন বাদ না পড়ে।

৭. জেনে নাও নম্বর বণ্টন

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত, কৃষিশিক্ষা, গার্হস্থ্যবিজ্ঞান বিষয়গুলোর ব্যবহারিক পরীক্ষায় মোট নম্বর থাকে ২৫। এই ২৫ নম্বর আবার বিভিন্ন অংশে ভাগ হয়ে যায়।

*বিষয়ভিত্তিক ব্যবহারিক পরীক্ষা—

১. তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ব্যবহারিক ক্লাস বা হাতে-কলমে শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কম্পিউটার ল্যাবে ছাত্রছাত্রীদের কাজগুলো করার সুযোগ দিতে হবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ব্যবহারিক কাজগুলোকে কতগুলো ল্যাবওয়ার্ক হিসেবে ভাগ করা যায়। প্রতিটি ল্যাবওয়ার্ক এক বা একাধিক ব্যবহারিক ক্লাসে সম্পন্ন করা যেতে পারে। যেকোনো ল্যাবওয়ার্কেরই রিপোর্ট লেখা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ল্যাবওয়ার্ক শেষে শিক্ষার্থীরা রিপোর্ট ব্যবহারিক খাতায় লিখে শিক্ষকের কাছে জমা দেবে।

২. পদার্থবিজ্ঞান

পদার্থবিজ্ঞানে একটি পরীক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়। এর মান ১৫। তত্ত্ব, উপকরণ বা যন্ত্রপাতি, ছক, হিসাব, ফলাফল, সতর্কতা ইত্যাদি প্রত্যেক অংশের জন্য আলাদা নম্বর মিলেই ১৫ নম্বর হয়ে থাকে। মৌখিক পরীক্ষার জন্য ৫ এবং ব্যবহারিক খাতার জন্য ৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে। তবে কোনো কোনো বছর নম্বর বিভাজনে একটু পরিবর্তন হতে দেখা যায়।

৩. রসায়ন

রসায়নেও একটি পরীক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়। এর মান ১৫। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্যাদির নাম ও তত্ত্ব উল্লেখকরণ, যন্ত্রপাতি সাজানো, যথাযথ ব্যবহার ও কার্যপ্রণালি, ধর্মসমূহ পরীক্ষা অর্থাৎ পরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত এবং ফলাফল লিখন, পরীক্ষা সম্পাদনকালীন পরিচ্ছন্নতা ও সতর্কতা ইত্যাদি প্রত্যেক অংশের জন্য আলাদা নম্বর মিলেই ১৫ নম্বর হয়ে থাকে। মৌখিক পরীক্ষার জন্য ৫ এবং ব্যবহারিক নোটবুক-এর জন্য ৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে। তবে কখনো কখনো নম্বর বিভাজনে একটু পরিবর্তন হতে পারে।

৪. জীববিজ্ঞান

জীববিজ্ঞানে একটি পরীক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়। এর মান ১৫। সাধারণত পরীক্ষণের নাম, উপকরণ বা যন্ত্রপাতি, কার্যপদ্ধতি ও প্রদর্শন, চিত্রাঙ্কন, চিত্র চিহ্নিতকরণ, পর্যবেক্ষণ, সিদ্ধান্ত, সতর্কতা ইত্যাদি প্রত্যেক অংশের জন্য আলাদা নম্বর মিলেই ১৫ নম্বর হয়ে থাকে। উপস্থাপনকৃত পরীক্ষণটির ফলাফল ব্যাখ্যা, মৌখিক পরীক্ষা এবং ব্যবহারিক খাতা বা শিটসমূহের জন্য বাকি ১০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। তবে কোনো কোনো বছর নম্বর বিভাজনে একটু পরিবর্তন হতে দেখা যায়।

৫. উচ্চতর গণিত

উচ্চতর গণিতে দুটি পরীক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়। এই দুটি পরীক্ষণের জন্য মোট নম্বর ২০। একটি পরীক্ষণের জন্য নম্বর ১০। সাধারণত প্রতিটি পরীক্ষণের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন, সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ, লেখচিত্র অঙ্কন ও উপাত্ত বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যাসহ ফলাফল উপস্থাপন ইত্যাদি প্রত্যেক অংশের জন্য আলাদা নম্বর মিলেই ১০ নম্বর হয়ে থাকে। অবশিষ্ট নম্বর মৌখিক পরীক্ষা ও ব্যবহারিক খাতার জন্য বরাদ্দ থাকে। তবে এ ক্ষেত্রেও কোনো কোনো বছর নম্বর বিভাজনে একটু পরিবর্তন হতে দেখা যায়।

৬. কৃষিশিক্ষা

কৃষিশিক্ষায়ও একটি পরীক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়। এর মান ১৫। তত্ত্ব, যন্ত্র বা উপকরণ সংযোজন ও ব্যবহার, সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ–উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ, ধাপসমূহ কাজের ধারা, পর্যবেক্ষণ, অঙ্কন, শনাক্তকরণ, অনুশীলন, ব্যাখ্যাসহ ফলাফল উপস্থাপন ইত্যাদি প্রত্যেক অংশের জন্য আলাদা নম্বর মিলেই ১৫ নম্বর হয়ে থাকে। মৌখিক পরীক্ষার জন্য ৫ এবং ব্যবহারিক খাতার জন্য ৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে। তবে কোনো কোনো বছর নম্বর বিভাজনে একটু পরিবর্তন হতে দেখা যায়।

৭. গার্হস্থ্যবিজ্ঞান

গার্হস্থ্যবিজ্ঞানে প্রশ্নে প্রদত্ত উপকরণ অনুযায়ী পরীক্ষণ সম্পন্ন করতে হবে। মোট নম্বর ২৫।

৮. চারুকলা

চারুকলা বিষয়েও প্রশ্নে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী অঙ্কন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

৯. সংগীত

সংগীত বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, বাদ্যযন্ত্র, তবলাবাদক ও শনাক্তকারী শিক্ষকসহ নিজ খরচে নির্ধারিত তারিখে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে নির্ধারিত কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে বলে বোর্ড নির্ধারিত সময়সূচিতে উল্লেখিত আছে।

ব্যবহারিক পরীক্ষায় আলাদাভাবে পাস করতে হয়। একটু সতর্ক থাকলে খুব ভালো নম্বর পাওয়া যায়। তত্ত্বীয় পরীক্ষার মতো ব্যবহারিক পরীক্ষাকক্ষেও খুব শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।

*ব্যবহারিক খাতা তৈরির দিকনির্দেশনা—

প্রতিটি ব্যবহারিক ল্যাবওয়ার্ক শেষে সুন্দরভাবে লিখে তা শিক্ষককে জমা দিতে হবে। ব্যবহারিক খাতায় ল্যাবওয়ার্কগুলো লেখার জন্য যে বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে হবে, সেগুলো হলো:

১.প্রতিটি ল্যাবওয়ার্ক ভালো মানের অফসেট কাগজে লিখতে হবে। বাজারের মানের কম্পিউটার শিক্ষা ব্যবহারিক খাতাও ব্যবহার করা যেতে পারে।

২.ব্যবহারিক খাতার প্রত্যেক পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠা নম্বর লিখতে হবে।

৩.কাগজগুলো সুন্দর করে মার্জিন করে নিতে হবে।

৪.প্রয়োজনে বিভিন্ন রঙের কালি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে লাল, কমলা ও হলুদ রঙের কালি ব্যবহার করা যাবে না।

৫.কাগজের এক পাশ ব্যবহার করতে হবে। কোনোক্রমেই উভয় পৃষ্ঠা ব্যবহার করা যাবে না।

৬.কোনো ল্যাবওয়ার্ক দীর্ঘ হলে পরবর্তী পূর্ণ পাতা ব্যবহার করতে হবে।

৭.একটি পাতার উভয় পৃষ্ঠায় ল্যাবওয়ার্ক লেখা যাবে না, শুধু এক পৃষ্ঠায় লিখতে হবে।

৮.প্রতিটি ল্যাবওয়ার্কের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পৃষ্ঠা ব্যবহার করতে হবে।

*লেখক: রমজান মাবুদ, সিনিয়র শিক্ষক, গবর্নমেন্ট সায়েন্স হাইস্কুল, ঢাকা.উৎসঃ প্রথম আলো 

No comments